ঢাকা, সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

দোহারে খাল দখল করে পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্থাপনা নির্মাণ

ঢাকার দোহার পৌরসভার ইমারত নির্মাণ নীতিমালার তোয়াক্কা না করে উত্তর জয়পাড়া কুঠিবাড়ী(দেউতলা) এলাকায় সরকারী খালের কিছু অংশ দখল করে দোহার পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা আক্তার গং এরা স্থাপনা নির্মাণ করছে বলে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। 


বুধবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর জয়পাড়া কুঠিবাড়ী (দেউতলা) আল মদিনা শাহী জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় সরকারি জয়পাড়া খালের(পদ্মা নদীর শাখা) বেশ কিছু অংশ দখল করে গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দোহার পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা আক্তার গং পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে খালের অনেকাংশই দখলকারীদের দখলে চলে গেছে। এতে করে জয়পাড়া খাল যেমন দখল হয়ে যাচ্ছে, তেমনি নতুন করে এই সীমানা ধরে খাল দখল করার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। 


দোহার পৌরসভার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই খালটি প্রশাসনের নাকের ডগায় দখল হয়ে যাচ্ছে অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করা হচ্ছে এই খাল। একটি সময়ে বর্ষায় পানির স্রোতে নদী পাড়ের জয়পাড়া-উত্তর জয়পাড়া এ রাস্তাটির পশ্চিম অংশসহ রাস্তার কিছু অংশ ভেঙ্গে খালে বিলীন হয়ে গেলে সড়কটি দিয়ে রিকশাও চলাচল করতে অসুবিধা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রাস্তাটি পুনঃরায় মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য তৎকালীন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাসেম আলী উদ্যোগ নেন এবং সরকারি বিশেষ বরাদ্ধে জয়পাড়া কুঠিবাড়ী(দেউতলা) থেকে উত্তর জয়পাড়া সাহেব বাজার পর্যন্ত খালের তীর জিও ব্যাগের সিনথেটিক কাপড়, ইট, মাটি এবং নেট দিয়ে রাস্তা মেরামত ও সংরক্ষণ করেন। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তাদের ক্রয়কৃত ৬ শতাংশ জমি থেকে সরকারি রাস্তায় কিছু অংশ চলে যায়। বর্তমানে রাস্তা বাদে উক্ত জমিতে পৌনে ৪ শতাংশ জমি মালিকানা রয়েছে। বর্তমানে যে স্থাপনাটি নির্মিত হচ্ছে এটি ক্রয়কৃত জমি বাদ দিয়েও সরকারি খালের বেশ কিছু অংশ দখল করা হয়েছে। তাদের পূর্বের টিনসেড দোকানগুলো ভেঙে ভবণ নির্মাণ করলেও ভবনের পেছনে অস্থায়ী টিন সেডের স্থাপনা রয়েছে। এর অধিকাংশই সরকারি জমির আওতাধীন রয়েছে বলে জানান।


জানা যায়, জমির ওয়ারিশদের একজন মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার বোন কুলসুম বেগম- বেগম আয়েশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ায় তাদের দাপটে স্থানীয় অনেকেই সরাসরি কথা বলতে সাহস পান না। তবে অনেকেই চাপা ক্ষোভ নিয়ে জানান, ইতোমধ্যে দোহার উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অনেক সরকারি জমি দখল মুক্ত করেছে এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারেও প্রশাসনের ধারাবাহিক ভূমিকা থাকবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন ।


এ বিষয়ে দোহার পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খাল দখল করেননি। আমাদের জায়গা সংরক্ষণের জন্য গাইড ওয়াল করেছি। 

জয়পাড়া মৌজার এস.এ ৩২২ নং দাগে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেছিলেন আমার মা। আমার মায়ের মৃত্যুর পরে ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির মালিক হয়েছি- আমিসহ ওমর ফারুক, আমের আলী, কুলসুম বেগম ও সাজেদা। এসময়ে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে তিনি অনুরোধ করেন। গাইড ওয়ালের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে তার ক্ষতির দায়ভার কে নিবে? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ব্যস্ততার অযুহাতে ফোন কেটে দেন। 


উক্ত জমির ওয়ারিশদের একজন বেগম আয়েশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ কুলসুম বেগম বলেন, আমরা কোনো সরকারি জমি দখল করিনি। বৈধভাবে এই জমির মাঝে স্থাপনা নির্মাণ করছি। গাইড ওয়ালের ক্ষেত্রে কারো অনুমতিপত্র নিয়েছেন কি না? এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। কতটুকু জমিতে আমাদের নির্মাণ কাজ চলছে সে সম্পর্কে আমি জানি না। আপনারা সাংবাদিকরা আমার পেছনে লেগেছেন। সরকারকে নিয়ে সরকারি খালের সীমানা নির্ধারণ করেন। এসময় সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নে উত্তর না দিয়েই তিনি স্থান ত্যাগ করেন।


দোহার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই তারা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ কাজ করছে। তারা এর আগে পৌরসভায় ইমারত নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলো। পৌর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আছে সরকারি খালের পাশ দিয়ে ২০ ফুট চওড়া রাস্তা হবে। নিয়ম অনুযায়ী সরকারি রাস্তার পাশে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন সাপেক্ষে রাস্তার দু’পাশে ১০ ফুট করে অতিরিক্ত জায়গা রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু উক্ত জমিটি সরকারি রাস্তা ও খাল সংলগ্ন হওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ তখন সেখানে কাজ করার অনুমোদন দেয়নি। বর্তমানে তারা পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে তাদেরকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভায় আসার জন্য নোটিশ দেওয়া হবে।


এ বিষয়ে দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, কেউ যদি ১ ফুটও সরকারি খাল দখল করে কোনরূপ স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি ইতিমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি এবং ঘটনা তদন্ত করতে উপজেলা থেকে লোক পাঠিয়েছি। ঘটনা সত্য হলে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে প্রভাবশালী যেই হোক।

ads

Our Facebook Page